Header Ads

  • তথ্যের কথা

    দয়া করে সার্টিফিকেট থেকে মুক্তি দিন!


    আমার নিকট আত্নীয়ের এক সন্তানের কথা জানি। ওই সন্তানটিকে প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে জাগানো হয়। একের পর এক শিক্ষকের বাড়ি ঘুরিয়ে তাকে পাঠানো হয় স্কুলে। সেখান থেকে কোচিং সেন্টার হয়ে অন্য শিক্ষকের বাড়ি। দুপুরের পর স্কুলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে সন্তানটি। সন্ধার আগে ঘুমে চোখ ভারী হয়ে পরে সন্তানটির। আধা ঘুমের মধ্রে রাত ১১টা নাগাদ যখন বাড়ি ফিরে আসে, তখন স্কুলের পোশাক না খুলেই বিছানায় এলিয়ে পড়ে সে। তাকে খাওয়ানোও কঠিন হয়ে পড়ে। সূর্য ওঠার আগে ঘুম ভাঙলেও এই সন্তানটি সূর্যোদয় দেখার সুযোগ পায় না। এভাবে প্রকৃতি-গাছপালা-প্রাণিজগৎ, সমাজ-বন্ধু-স্বজন ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তার উত্তর মা-বাবারও জানা নেই। তাকে মা-বাবার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে গোল্ডেন এ প্লাস এর স্বপ্ন।
    পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সমাপনী পরিক্ষা চালুর কল্যাণে এখন শিশুদের উপর প্রচন্ড চাপ। সরকারের সর্বশেষ একাডেমিক তদারিক প্রতিবেদনে বলা হলো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫৪ শতাংশ শিক্ষক এখনো সৃজনশীল পদ্ধতি আয়ত্ত করতে পারেননি। সৃজনশীল বোঝার ক্ষেত্রে শিক্ষদের অবস্থা যখন এ রকম, শিক্ষার্থীরা কতটা সৃজনশীল হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। শিক্ষার কাজটা করে দিচ্ছেন অভিভাবক, প্রাইভেট টিউটর, কোচিং সেন্টার আর গাইড বই। সব সমাধানই সে পেয়ে যাচ্ছে প্যাকেজ আকারে।
    👉☺
    মেধার সার্টিফিকেট-সক্রান্ত একটি গল্প দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই। গল্পটি একটি নাটকের। মুখে খোঁচা দাড়িঁ আর মলিন পোশাকে এক ভদ্রলোক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকলেন। বললেন: স্যার আপনি হয়তো আমকে চিনতে পারেননি। ১৫ বছর আগে আমি এই বিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়ে যাই। ওই সময়ে আমি ছিলাম বিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র।
    মাধাবী কথাটি শুনে প্রধান শিক্ষক তাঁর ছাত্রটিকে চিনতে পারেন। চা-বিস্কুট খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তাকে বাধা দিয়ে ভদ্রলোক পুনরায় বলতে থাকেন। না স্যার, আমি চা খেতে আসি নাই। এই বিদ্যালয় থেকে পাস করার পর আমি উচ্চশিক্ষা লাভ করি।  এরপর গত সাত-আট বছর বিভিন্ন স্থানে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু খাপ খাওয়াতে পারিনি কোথাও। বুঝেছি, এমন কিছু আমি শিখিনি, যা দিয়ে বাস্তবকে মোকাবিলা করা যায়। আমি ব্যর্থ হয়েছি স্যার। আমার জীবনে আপনাদের দেওয়া সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই। তাই আমি এসেছি সার্টিফিকেট ফিরত দিতে। দয়া করে এই সার্টিফিকেটটি গ্রহণ করে আমাকে মুক্তি দেন!

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728